আমরা হরহামেশাই বিভিন্ন রকম ডিফিকাল্ট পরিস্থিতে পরে যাই সেটা পার্সোনাল লাইফে হোক অথবা প্রফেশনাল লাইফে। পরিস্থিতি ভেদে যদিও এর তীব্রতা ভিন্ন এবং মানুষ ভেদে একেকজনের সিচুয়েশন হ্যান্ডেল করার ধরনও ভিন্ন। কেউ তার বুদ্ধিমত্তা এবং নিজের আবগের উপরে অধিক নিয়ন্ত্রণ রেখে যে কোনো প্রেশার অনেক স্বাভাবিকভাবে ম্যানেজ করে ফেলতে পারেন, আবার কেউ না অনেক বেশি সাফারিংস এর ভেতর থেকে অতিবাহিত করেন।
এক যুগেরও বেশি দারুন এক কর্মজীবনে আর সবার মত আমারো এমন অনেক পরিস্থিতি ছিল , যা কিনা হ্যান্ডেল করা অনেক দুরুহ ছিল কিন্ত সময় এবং অভিজ্ঞতার বাড়ার সাথে সাথে আমার নিজেরও এমন বিরুপ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতাও বাড়ে। নিজের ব্যাপারে আমি যেসব কমপ্লিমেন্ট আমার চারিপাশ থেকে পাই, তা হচ্ছে – সিচুয়েশন কন্ট্রোল করার ব্যাপারে। অনেকে আবার আমার কাছেও জানতেও চান– আমি কি প্রসেস অনুসরন করি যে কোন বিরুপ পরিস্থিতি কন্ট্রোল করতে। মজার ব্যাপার হচ্ছে- আমি কোনো প্রসেস ফলো করিনা কিংবা কোনো গোপন জ্ঞানও নেই আমার। আমার সবকিছুতেই নিজের একটা থিউরী থাকে, সেগুলো মোটেও এমন না যে –আমিই আবিষ্কার করেছি, তবে আমি বিশ্বাস করি, জীবনের সবকিছুর পেছনে নিজের একটা থিউরী থাকাটা দরকার।
আমি এখানে, ডিফিকাল্ট সিচুয়েশন হ্যান্ডেল করার আমার নিজের কিছু থিউরী শেয়ার করছি-
১) আদৌ এটা কোনো সমস্যা কিনা – বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা খুব দ্রুত প্যানিকড হয়ে যায়, খুব অল্পতেই হতাশ হয়ে যাওয়াটা আমাদের কম বেশি সবারই অভ্যাস এবং আমিও এর ব্যাতিক্রম নই। তবে, এখন আমি যে কোনো বিরুপ পরিস্থিতিতে ভাবার চেষ্টা করি যে- এটা কি আদৌ কোনো সমস্যা নাকি জাস্ট একটা সিচুয়েশন। এখানে প্রশ্ন আসতে পারে- সমস্যা এবং সিচুয়েশনের ভেতরে পার্থক্য কি?! ব্যাকরনিক পার্থক্য অনেক কিছুই থাকতে পারে, তবে আমি মনে করি- আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনে যে সব ঘটনা অবশ্যাম্ভাবী সেগুলোকে আমি সিচুয়েশন বলে ব্যখ্যা করি। উদাহরন হিসেবে বলা যেত পারে – খুব গুরুত্ত্বপুর্ন কেউ মারা গেলেন, জব ছেড়ে টিমের খুব গুরুত্ত্বপুর্ন কেউ সাডেন চলে গেলেন বা ভয়ানক কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলো। এগুলোকে কোনোভাবেই আমরা কন্ট্রোল করতে পারিনা, তাই এই ব্যাপারগুলোকে আমি বলি সিশুয়েশন । আর সমস্যা হিসেবে আমি শুধুমাত্র সেগুলোকেই ব্যখ্যা করি যেগুলোর সমাধান আছে। যেমন- কেউ মারা গেলে তার ফ্যামিলি কিভাবে টিকে থাকবে, কোনো গুরুত্ত্বপুর্ন ইমপ্লয়ী চলে গেলে কিভাবে তার রিপ্লেসমেন্ট বের করা যাবে অথবা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে হওয়া ক্ষয়ক্ষতি কিভাবে কমানো যায়।
জীবনের যে ব্যাপারগুলোর আমার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, সেগুলোকে নিয়ে বেশি ভাবতে পছন্দ করিনা বা স্বভাবগত কারনে ভাবতে চাইনা। আর যে ব্যাপারগুলোর সমাধান করা সম্ভব এবং যা আমার কন্ট্রোলের ভেতরে আছে তা নিয়ে আমি ভাবতে পছন্দ করি এবং খুবই স্ট্রেট সমাধানের জন্য কাজ করতেও পছন্দ করি।
সকাল থেক রাত অব্দি আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ঘটনার সম্মুখীন হই এবং সংগত কারনে বেশিরভাগই সুখকর হয়না। প্রতিটি কারনে যদি আমরা আহত হই, তাহলে দিন শেষে আমরা নিজেদের একজন ব্যার্থ মানুষ ছাড়া আর কিছুই ভাবব না। তাই প্রতিটি ঘটনাকে প্রথমেই ভেবে নিতে হবে- এটা নিয়ে আমার মাথা ঘামানো উচিত নাকি উচিত না। যদি মনে করি, মাথা ঘামানো উচিত তাহলে একদম শতভাগ পজেটিভ মাইন্ডসেট নিয়ে সেটার সল্যুশন নিয়ে কাজ করব আর যদি মনে করি, এ ঘটনার আমার কিছু করার নেই, বা আমার কন্ট্রোল নেই তাতে খুব বেশি ন্যাগেটিভ না হয়ে ব্যাপারটি মেনে নেয়ার মধ্যেই সবচেয়ে বেশি ভালো থাকা সম্ভব।
২) ফোকাসটা রাখা উচিত সমাধানের উপরে
যখন আমি সমস্যা আইডেন্টিফাই করতেই পারি। আমার পুরো ফোকাসটা তখন থাকে সমাধানের উপরে। কিছু সমস্যা আছে সাময়িক যেটার জন্য সাময়িক সমধান দরকার আবার কিছু থাকে রিপেটেটিং, যার জন্য পার্মানেটন্ট সমাধান দরকার হয়। কিন্ত ধরন যাই হোক, সমস্যাটার সরল সমাধান করাটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ত্ব বহন করে এবং সেটি করতেই আমার শতভাগ উজাড় করে দেই।
৩) ধৈর্য ধারনঃ সবচেয়ে আদিম সুত্র – ধৈর্য ধারন । যে কোনো বিরুপ পরিস্তিতিতে ধৈর্য ধারনের কোনো বিকল্প নেই। ধৈর্য্য বাড়ানো একটা প্রসেস, আমাদের অনেকেরই এটা বাড়ানো নিয়ে অনেক ন্যাগেটিভিটি রয়েছে। কিন্ত সময় এবং অভিজ্ঞতা বাড়ানোর সাথে সাথে এটা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।
৪) একদম পজেটিভ থাকা এবং অদরকারী কথা না বলা – বিরুপ পরিস্থিত্তে পজেটিভ থাকাটা খুবই কঠিন যে কোনো কারো জন্যই, তবে এক্ষেত্রে আমি নিজের উপরে ভরসা রাখি এবং নিজের অবস্থানে অনড় থাকার চেষ্টা করি এবং কিছুটা চুপ থাকি। একদম দরকার ছাড়া অদরকারী কথা বার্তা বা সংগ পরিহার করি।
৫) নিজেকে ভাড়মুক্ত রাখা- আমাদের অনেকের-ই একটা অদ্ভুত অভ্যাস হচ্ছে – যে কোনো দুর্যোগের জন্য শেষমেষ নিজেকে দায়ী করা বা অন্য কাউকে দোষারপ করা। আমি একদমই চেষ্টা করি – এর কোনোটাই না করা। এক্সিডেন্টকে এক্সিডেন্ট হিসেবেই দেখতে পছন্দ করি, নিজেকে এবং অন্য কাউকে এর জন্য একান্তভাবে দোষারোপ করিনা। নিজেকে একটু রিলাক্স থাকার জন্য পছন্দের মানুষদের সাথে আড্ডা দেই দরকারে, পহন্দের গান শুনি এবং অনেক মজার মজার জোক্স পড়ি।
ডিফিকাল্ট সিচুয়েশন সবার জীবনেই খুবই রেগুলার ঘটনা । এটাকে কোনোভাবেই –শুধু আমার সাথেই কেন- এমন ছেলেমানুষী আবেগে ইগ্নর করার সুযোগ নেই। এইসব পরিস্থিতিই কিন্ত আমাদের দিনে দিনে ম্যাচিউর করে এবং নিজেদের ব্যাক্তিত্ত্বকে বিকশিত করে। তাই শুধু শুধু ভয় না পেয়ে সল্ভ করার মানষিকতা নিয়ে কাজ করে গেলে যে কোনো সিচুয়েশনেরই সমাধান সম্ভব।